যেন নাম থেকেই আন্দাজ করা যায় কেমন হতে পারে কিনু গোয়ালার গলি। বোবা বোবা চেহারার বাড়ি। ছোট ছোট ফোকরচোখ জানালা আর চুন খসা খিলানের হাঁ। আলো যেখানে পালাই পালাই করে, দেয়ালে মাঝে মাঝে স্যাঁতা পড়া দাগ। হারিয়ে যাওয়া অতীতের কথা স্মরণ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া নিতান্ত অসহায়ের মত এই গলির মানুষগুলোরও একেকতা অতীত রয়েছে। যেমন রয়েছে নীলাদেরও। একসময়ে প্রাচুর্য্যে ভরা ছিল তাদেরও জীবন। ক্রমে ক্রমে দারিদ্রতার চরম কষাঘাতে জর্জরিত হতে হতে আজ এই গলিতে ঠাই হয়েছে তাদের।
নীলাদের আসার পর থেকে ক্রমে ক্রমে আরো কিছু মানুষের আগমত ঘটে এই গলিতে। বুড়ো প্রমথ পোদ্দার বন্ধ ঘরের অন্ধকার ফুড়ে বের হওয়া দুটি চোখ দিয়ে সবই দেখে। দেখে আর স্বপ্ন দেখে পুরোনো দিনের মত আবারো জমজমাট হয়ে উঠবে এই গলি।
নীলাদের বাড়িতেই অন্য ভাড়াটিয়া শান্তি-মনীন্দ্র দম্পতি। প্রথম থেকে একটু অদ্ভুত মনে হয় তাদের আচরণ। সাহিত্যিক আনমনা স্বামীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতেই নাকি শান্তি ইন্দ্রজিতের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। কিন্তু মনিন্দ্র যেন দেখেও দেখেনা, শুনেও শোনে না। সবকিছু বুঝে শান্তি যখন অন্য অস্ত্রের সন্ধান করতে থাকে তখনই ইন্দ্রজিতকে শান্তির থাবা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে নীলা। দৈবের চক্রে ঘুরতে ঘুরতে একসময় শান্তি আর মনীন্দ্র খুজে পায় একে অপরকে। ইন্দ্রজিৎকে চিরবিদায় জানিয়ে শান্তি যখন হারিয়ে যায় অজানায় ব্যক্তিত্বহীন ইন্দ্রজিৎ তখন নীলার আঁচলের তলেই খুজে পায় বেঁচে থাকার ভরসা।
তবে এই অন্ধকার গলিতে মাঝে মঝে আগমন ঘটে নীলার বৌদি’র কাকা অবিনাশ বাবুর মত কিছু নর্দমার কিটের, যারা সবকিছু নষ্ট করে দিতে চায়। তবে জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সইতে সইতে নীলারাও বুঝে যায় নখ দাঁতহীন অবিনাশদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে বরং কিভাবে কিছুটা সুবিধা আদায় করে নিতে হয়।
উপন্যাসের আরেকটি সংগ্রামী চরিত্রের নাম শকুন্তলা। প্রতারক স্বামীর হাত থেকে পালিয়ে নার্সের জীবন বেঁচে নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যে স্বপ্ন দেখে আরো কিছু স্রোতেভাসা মেয়েকে আশ্রয় দিতে। কিন্তু বনমালীর মত মানুষেরা শকুন্তলাদের সফল হতে দেয় না। তবে শকুন্তলারাও মচকায় তবু ভাঙ্গে না।
উপন্যাসের শেষটা যেন ‘শেষ হইয়াও হইলনা শেষ’ এর মতো। কোন বিশ্লেষণ নেই, কোন পরিণাম নেই। তবে স্বপ্ন আছে। ২৫ টাকা মাসিক বেতনের কথা শুনে নীলারা মিইয়ে গেলেও ইন্দ্রজিৎরা স্বপ্ন দেখে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন