বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

বাড়ি থেকে পালিয়ে- শিবরাম চক্রবর্তী

 


আমার বই ডট কমে একটা তালিকায় বইটা পেয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। যদিও শিবরাম চক্রবর্তীর এই বইটির নাম আগেও শুনেছিলাম। কাঞ্চন নামে এক কিশোর তাদের পুরুতের সমবয়সী ছেলে বিনোদের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে বিনোদের দইয়ের ভাড় কেড়ে নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দেয় এবং ক্ষীরের বাটি কেড়ে নেয়। ফলাফল, কিছুক্ষণ বাদেই বাড়ির চাকর এসে খবর দেয় বাবা তার জন্য চাবুক হাতে অপেক্ষা করছে। 

কাঞ্চন আর বাড়িতে ফিরে না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় রেল স্টেশনে এবং কোনকিছু না ভেবেই উঠে যায় ট্রেনে। ট্রেন তাকে পৌছে দেয় বর্ধমানে। সেখানে এক পবীত্র হোটেলে আহার সেরে টাকা না দিয়েই আবার উঠে পড়ে ট্রেনে। এবার সে পৌছে যায় কোলকাতা শহরে। কোলকাতায় পৌছে তার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। একেবারে অজপাঁড়াগায়ের ছেলে কাঞ্চন অবাক নেত্রে দেখতে থাকে রিকশা, মোটরগাড়ি, ব্যান্ড পার্টি, হাওড়া ব্রিজ, কলের জাহাজ, ইলেকট্রিক বাতি আর হরেকরকম মানুষ। 

কলকাতায় তার সাথে একের পর এক ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। কখনও সে মিস্টির দোকানে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, কখনও সে স্বপ্ন দেখে রাস্তায় জল দেওয়ার কাজ করার। এক বরযাত্রী দলের সাথে চলতে চলতে সে পৌছেঁ যায় বিয়েবাড়িতে। সেখানেই তার পরিচয় হয় মিনির সাথে। মিনিকে তার খুব ভালো লাগে তবে মিনির বড় দাদার শক্ত শক্ত ইংরেজি শব্দের অর্থ বলতে না পারায় খুব লজ্জিত বোধ করে যে। তবে খুব কষ্ট লাগে যখন সে দেখতে পায় বিয়েবাড়ির বাইরে মানুষ আর কুকুর ফেলে দেওয়া খাবার কাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে। ইট-পাথরের শহরে সে এই প্রথম মানসিকভাবে ধাক্কা খায়। সে ভাবতে থাকে- “এত বড় শহর, এখানে এত বড়লোক, লোকের এত টাকা, এমন ভোজ, এমন শোভাযাত্রা আর এখানে মানুষকে কুকুরের সঙ্গে কাড়াকাড়ি ক’রে খতে হয়! কাকে দয়া করবে- কার পক্ষে সে দাঁড়াবে? কুকুরের, না মানুষের?” এমন কিছু প্রশ্ন যেকোন বয়সের পাঠকের মনকে নাড়া দেবে নিঃসন্দেহে। 

এরপর চা’য়ের দোকানে গান্ধীজী, স্বরাজ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা, গরীব মানুষদেরও স্বরাজ হবে ত? স্বরাজ হ’লে তারা ভাল খেতে পারবে, পরতে পাবে? গরীবদের আবর্জনা ঘেঁটে আর পথের এঁটোকাঁটা কুড়িয়ে খেতে হবে না তো?” ভদ্রলোক এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেন না। 

গল্পের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটে যখন এক ভদ্রলোক তাকে মোটরগাড়িতে তুল নেন এবং একটি রেসের ঘোড়া পছন্দ করতে বলেন। যদিও কাঞ্চন জানতো না ‘রেস’ বিষয়টা কি, তবে মায়ের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা থেকে সে “মাই মাদার” নামে একটি ঘোড়া পছন্দ করে। নাটকীয়ভাবে সেই ঘোড়া জিতে যায় এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরস্কারের অর্ধেক টাকা পেয়ে যায় কঞ্চন। একবারে এতগুলো টাকা সে স্বপ্নেও দেখেনি কোনদিন। ভদ্রলোক তাকে টাকার সাথে একটি ব্যাগও দিয়ে দেন। এরপর সে মায়ের জন্য, ভাইয়ের জন্য অনেক কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে ফিরে সে মা’এ অবাক করে দেয়।  

একটি কিশোর উপন্যাস হিসাবে আমি এটিকে দশে দশ দিতে চাই। তবে বইটি সম্পর্কে অন্যরা কি ভাবছে সে গুগলে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম। এই কাহিনী নিয়ে একটি চলচিত্রও আছে। পরিচালক ঋত্তিক ঘোটক। ভাবছি এবার ছবিটা দেখতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন