বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বাঘ বিধবাদের কথা, শংকর কুমার মল্লিক ও দেবপ্রসাদ বিসমিল

 

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ভয়ংকর সুন্দর এক চতুষ্পদ প্রাণি বাঘের বিচরণক্ষেত্র পৃথবীর বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সুন্দরবনের আশেপাশের মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরনের উদ্দেশ্যে ছুটে যান বনের ভিতর আর তাদের অনেকেই পরিনত হন বাঘের খাবারে। তারপর তাদের পরিবার তথা স্ত্রী-সন্তানদের দূর্ভোগের সীমা থাকে না। বিশেষ করে তাদের স্ত্রীদের যাদেরকে বলা হয় ‘বাঘ বিধবা’, সামাজিকভাবে অনেক ছোট করে দেখা হয়। সন্তানদের নিয়ে ঐসব বাঘ বিধবাদের শুরু হয় কঠিন সংগ্রাম। এইসব সংগ্রামী বাঘ বিধবাদের গল্প উঠে এসেছে “বাঘ বিধবাদের কথা” বইটিতে। গবেষণাধর্মী এই বইটি যৌথভাবে লিখেছেন শংকর কুমার মল্লিক এবং দেবপ্রসাদ বিসমিল। ব্যক্তিগতভাবে জনাব শংকর কুমার মল্লিকের সাথে আমার পরিচয় নেই তবে আইসিটি ফর এডুকেশন এর অ্যাম্বসেডর হিসাবে একসাথে কাজ করার সূত্রে পরিচয় আছে দেবপ্রসাদ মিসমিলের সাথে। তিনিই সম্প্রতি বইটি আমাকে উপহার দেন। যথেষ্ঠ সময় নিয়ে বইটি পড়েছি। যতই পড়েছি ততই জেনেছি সুন্দরবন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। শুরুতে ‘সুন্দরবন’ নামের উৎপত্তি এবং সুন্দরবনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে বইটিতে। সুন্দরবনের লৌকিক দেবদেবী ও অলৌকিক কাহিনিও বর্ণনা করা হয়েছে। সুন্দরবনের আশেপাশের মানুষের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বনবিবি, গাজী-কালু-চম্পাবতীর কাহিনী। সুন্দরবনে সম্পর্কে আগ্রহী মানুষদের পিপাসা মেটাবে এ বইটি তাতে কোন সন্দেহ নেই। সর্বোপরি যাদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে বইটির মূল কলেবর অর্থাৎ সেই বাঘ বিধবাদের জীবনের কথা বলা হয়েছে খুবই মর্মস্পর্শী ভাষায়। বইটি পড়ার সময় বার বার মনে হয়েছে প্রতিটি বাঘ বিধবাই যেন এক একটি জীবন্ত উপন্যাস। সামাজিকভাবে নিপীড়িত নিগৃহীত এইসব বিধবাদের জীবনের দুঃখের করুণ চিত্র পাঠকের চোখের সামনে সুনিপুণ ও প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন লেখকদ্বয়। বইটি পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই চোখের পাতা ভিজে যাবে পাঠকের।  

পাঠক হিসেবে গল্প, উপন্যাস, ভ্রমনকাহিনী আমার পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকলেও এমন একটি গবেষণাধর্মী বইও যে এতটা ভালো লাগবে তা আমি বইটি পড়ার আগ পর্যন্ত ভাবতে পারিনি। লেখক শংকর কুমার মল্লিক এবং দেবপ্রাসাদ বিসমিলকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। এমন একটি গবেষণাধর্মী বই লেখার পেছনে তাদের যে কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় রয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। বিশেষ করে দেবপ্রসাদ বিসমিল যিনি এর আগেও একটি গবেষনাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন “অগ্নিযুগে বাংলার বিপ্লব ও বিপ্লবী (১৯০১-১৯৪৭)” নামে, আপনার এইসব সৃজনশীল কর্মকান্ড অব্যাহত থাকুক এই শুভ কামনা নিরন্তর।  

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

পারোতো খালি আমার মতো পালের সাথে

 


কোন এক ঝড়বৃষ্টির রাত। একজন মুসলিম পথিক স্থানীয় পাল মশাইদের কালি মন্দিরের ছোট্ট বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। ঝড়ের গতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পথিক বৃষ্টির তোড়ে বাধ্য হয়ে মন্দিরের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে। 

         বৃষ্টিভেজা রাতে, কাঁথা মুড়ি দিয়ে পাল মশাই ঘুমিয়ে পড়েছে। হটাৎ ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখছে; কালী দেবতা তাকে বলছে - "ওরে মূর্খ পাল, তুই মন্দিরে মুসলমান বসিয়ে রেখেছিস! অচিরেই তোর সর্বনাশ হবে!"

মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পুরস্কার হিসেবে ঘটি, বাটি, থাল ! আর কতকাল ?

 


আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে সিরামিকের থালা, প্লেট, বাটি, মগ দেওয়ার রীতি বেশ পুরোনো। কিন্তু পুরস্কার হিসেবে থালা, বাটি, মগ কতটা উপযুক্ত তা ভেবে দেখার যথেষ্ঠ অবকাশ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যখন কোন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয় তখন সেটা তার জন্য একটা অর্জন। এই অর্জনের পুরস্কার হিসাবে তাকে যে থালা, বাটি বা মগ দেওয়া হলো তা কয়েকদিনের মধ্যেই তার বাড়ির থালা, বাটির সাথে মিশে যায়, একজন শিক্ষার্থীর কোন প্রাপ্তি হিসেবে তার আর কোন অস্তিত্বই থাকে না।