আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে সিরামিকের থালা, প্লেট, বাটি, মগ দেওয়ার রীতি বেশ পুরোনো। কিন্তু পুরস্কার হিসেবে থালা, বাটি, মগ কতটা উপযুক্ত তা ভেবে দেখার যথেষ্ঠ অবকাশ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যখন কোন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয় তখন সেটা তার জন্য একটা অর্জন। এই অর্জনের পুরস্কার হিসাবে তাকে যে থালা, বাটি বা মগ দেওয়া হলো তা কয়েকদিনের মধ্যেই তার বাড়ির থালা, বাটির সাথে মিশে যায়, একজন শিক্ষার্থীর কোন প্রাপ্তি হিসেবে তার আর কোন অস্তিত্বই থাকে না।
কিন্তু পুরস্কার হিসেবে একটা ক্রেস্ট বা মেডেল বা বই প্রদান করা হলে তা স্মৃতি হিসেবে থেকে যেতে পারে আজীবন। শিক্ষার্থী যখনই সেই ক্রেস্ট, মেডেল বা বইটি হাতে নেয় তখনই তা তাকে মনে করিয়ে দেয়, “তুমি সেরা হয়েছিলে!” এটা নিঃসন্দেহে তাকে অনুপ্রাণিত করে। এমনও হতে পারে, এর থেকে সে খুজেঁ পেতে পারে জীবনের কোন কঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ। ক্রেস্ট বা মেডেল দেওয়া সবসময় সম্ভব না হলেও বই হতে পারে সবচেয়ে সুন্দরতম পুরস্কার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনই যখন মুখ্য উদ্দেশ্য তখন বই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের তৃষ্ণাকে বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ। নতুন প্রজন্মের বই বিমুখতা নিয়ে আমরা কথা কথাই না বলি কিন্তু তাদেরকে বই পড়ায় উৎসাহিত করতে আমরা কি ভূমিকা রাখি? একবার নিজের কাছে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে সহজেই। স্কুল, কলেজের এইসব প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসাবে বই প্রদান করলে তা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীকে বই পড়ায় উৎসাহিত করবে।
অন্যদিকে থালা, বাটি, মগ শিক্ষার্থীদের বৈষয়িক লোভ লালসার দিকেই উৎসাহিত করে। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে কোন প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে এমন থালা, বাটি, মগ দেওয়ার প্রচলন নেই। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলের বিতর্কের মুখে ২০১৯ সালে ৪ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ঐ প্রজ্ঞাপনে বলা হয় :
“লক্ষ করা যাচ্ছে যে, বিদ্যালয়গুলোর সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রতিযোগীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে ক্রোকারিজ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
এ ধরনের পুরস্কার শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ প্রেক্ষিতে গুণগত শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সকল অনুষ্ঠানে প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বয়স উপযোগী মানসম্মত বই অথবা শিক্ষা সহায়ক উপকরণ প্রদান করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।”
এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার সত্ত্বেও এখনও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পুরস্কার হিসেবে থালা, বাটি, মগ প্রদানের ধারা অব্যাহত আছে।
বিষয়টি দুঃখজনক !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন