ইংরেজিতে এমএ শেষ করেও কোন চাকরী যোগাড় করতে পারিনী জয়দীপ। কোলকাতায় কোথাও থাকার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে পরিচিত একজনের অফিসে চুরি করে রাতে বেলায় ঢুকে রাত্রিযাপন করে সে। আপতদৃষ্টিতে বৈচিত্রহীন এবং অনিশ্চিত এক জীবন কাটানো এই জয়দীপের জীবনে হঠাৎ করেই দু’জন নারীর আবির্ভাব ঘটে। কেমন যেন নিস্তব্ধভাবে শুরু হওয়া উপন্যাসটি হঠাৎ করেই হয়ে ওঠে একটি থ্রিলার। এমন হঠাৎ করেই বিচিত্রসব ঘটনার ঘনঘটায় মনে হয় আমি যেন সমারেশ মজুমদারের কোন লেখা পড়ছি না বরং সস্তা কোন লেখকের লেখা কোন চলচিত্রের চিত্রনাট্য পড়ছি। অবশ্য এটা খুব সাময়িক সময়ের জন্যই মনে হয়েছিল কিন্তু শেষ দিকে দিয়ে আবারো উপলব্দি হলো গল্পের এমন ঘন ঘন বাঁক পরিবর্তন, এমন সাবলিলভাবে উপস্থাপন কোন সস্তা লেখকের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আর গল্পের শুরুটা যে একেবারে নিস্তব্ধভাবে হয়েছে সেটাও বলাটা মনে হয় ঠিক হলো না। শুরুতেই অযাচিতভাবে একটা গুন্ডা প্রকৃতির মানুষের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় জয়দীপের চরিত্রে আসলেই ভিতরে ভিতরে একটা প্রতিবাদী সত্তা ছিলো।
ভালো একটি চাকরিতে যোগদানের চিঠি পাবে এই আশায় বান্ধবীর কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার করে নিয়ে জয়দীপ যায় নিজের শহর বিহারে। সেখানেই পরিচয় হয় স্বাতীলেখা ও পত্রলেখা নামের দুই বোনের সাথে। স্বাতীলেখা সেখানে এসেছে প্রেমিকার কাছে বিয়ের দাবী নিয়ে। কিন্তু যার কাছে বা যার খোঁজে তারা সেখানে যায় সে ছিলো একজন আন্ডারগ্রাউন্ডের লোক। ঘটনাচক্রে জয়দীপ হয়ে যায় প্রাইভেট ডিটেকটিভ এবং ঐ দুই বোনকে সাহায্যের জন্য জড়িয়ে পড়ে ভয়ংকর এক ঘটনার জালে। অনেকটা কাকতলীয়ভাবে এবং কিছুটা ভাগ্যেরে জোরে সে সফলভাবে এই দুইবোনকে রক্ষা করে নিয়ে পৌছেঁ যায় দিল্লিতে। সেখানে আবার নতুন রহস্যের আবর্তে অনেকটা নাস্তানাবুদ হয়ে অবশেষে স্বাতিলেখাকে নিয়ে চলে আসে কোলকাতায়। অদ্ভুতভাবে স্বাতীলেখার অনাকাঙ্খিত সন্তানের অ্যাবার্শন করাতে গিয়ে নিজেকে আরো জড়িয়ে ফেলে স্বাতীলেখার সাথে। পাঠক বুঝতে পারে গল্পের পরিণতি।
সব মিলিয়ে বইটা মন্দ লাগেনি। অন্তত সময়টা ভালই কেটেছে। পুরোটা সময় বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। সামান্য সময়ের জন্য বিরক্তি আসেনি। কিছু কিছু ঘটনা অতিনাটকীয় মনে হলেও দিনশেষে ভুলে গেলে চলবে না সে নাটক তো নাটকীয়ই হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন