মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২

দ্রোণ পুত্র অশ্বত্থামা

 


অশ্বথামা

অস্ত্রগুরু দ্রোণ এর পুত্র। তার মাতার নাম কৃপী। জন্মের সময় অশ্বের মত শব্দ করেছিলেন বলে তার এইরূপ নামকরণ করা হয়। তবে কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি সামরিক হাতির নামও অশ্বত্থামা ছিল। পরিকল্পিতভাবে ভীম হাতিটিকে হত্যা করার পর, সেই সংবাদ যুধিষ্ঠির গুরু দ্রোণকে বলা হলে তিনি ধর্মপুত্রের কথা বিশ্বাস করেন এবং অস্ত্র পরিত্যাগ করেন। এ সময় দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণাচার্য্যের শিরোচ্ছেদ করেন। 

ভরদ্দাজ মুনির পুত্র দ্রোণ ব্রাহ্মণ হয়েও পিতার নির্দেশনায় অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং পিতার দেওয়া শিক্ষাই তিনি তার ছাত্রদের শেখাতেন। ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করে যারা একই সাথে ব্রাহ্মণ্য এবং ক্ষাত্রধর্ম পালন করে, তাদের ব্রহ্মক্ষত্রিয় বলা হয়। পরশুরামেও ব্রহ্মক্ষত্রিয় ছিলেন। দ্রোণ একবার তার বাল্যকালের মিত্র রাজা দ্রুপদের কাছে গেলে তিনি গুরু দ্রোণকে অপমান করেন। আর সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে তিনি হস্তিনাপুরে এসে তার যোগ্য শিষ্য খুঁজতে থাকেন। সেখানে তিনি কৌরব কুমারদের সাথে তার একমাত্র পুত্র অশ্বত্থামাকে যুদ্ধ শিক্ষা দিতে আরম্ভ করেন। গুরু দ্রোণ দেখতে পেলেন সেখানে ধনু বিদ্যাতে অর্জুন বিশেষ দক্ষতা অর্জন করছে, তাই তিনি তার পুত্র অশ্বত্থামাকে সেরা ধনুর্বি‌দ হবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অশ্বত্থামা বহু গুপ্ত অস্ত্র প্রয়োগের কৌশল পিতার কাছ থেকে শিখেছিলেন। 

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও অশ্বত্থামা

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতার ন্যায় অশ্বত্থামাও কৌরবদের পক্ষে ছিলেন। যুদ্ধে তিনি পাণ্ডবদের বহু সেনা হত্যা করেন। তাকে বধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্যও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে দ্রোণকে বধ করার জন্য পাণ্ডবগণ শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে ভীম পাণ্ডবপক্ষের ইন্দ্রবর্মার অশ্বত্থামা নামক হাতিকে হত্যা করেন। আর সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন যুধিষ্ঠির। আর একমাত্র গুরু দ্রোণ যুধিষ্ঠিরের কথাকে বিশ্বাস করবেন। তাই যুধিষ্ঠির দ্রোণের উদ্দেশ্যে ‘অশ্বত্থামা হতঃ- ইতি গজ’ (অশ্বত্থামানামক হাতী নিহত হয়েছে) বাক্য উচ্চারণ করেন। ইতি গজ শব্দটি আস্তে বলাতে দ্রোণচার্য মনে করেন যে তার পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর দ্রোণাচার্য অস্ত্র ত্যাগ করলে ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে হত্যা করেন। আর তাতে অশ্বত্থামা ভীষন খেপে যায়। 

শেষ জীবনে অশ্বত্থামা

কর্ণের মৃত্যুর পর দুর্যোধন অশ্বত্থামাকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কৌরবদের পরাজয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখন অশ্বত্থামা দুর্যোধনের কাছে জানতে চান কি করলে তিনি খুশি হন। উত্তরে দুর্যোধন বলেন তিনি পাণ্ডবদের বংশকে নিশ্চিহ্ন দেখতে চান। মিত্রের কথা রক্ষার জন্য অশ্বত্থামা সাথে সাথে পাণ্ডবদের শিবিরে গমন করেন। তার সাথে ছিলেন কৌরবপক্ষীয় জীবিত আর দুইজন, কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা। রাত্রে অশ্বত্থামা দেখেন গাছের ডালে কাকের বাসাকে প্যাঁচা আক্রমণ করছে। তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় পাণ্ডবদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। কৃপ আর কৃত এই নীচ কাজে আপত্তি জানালেও অশ্বত্থামা শুনলেন না। তারা শিবিরে গিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্নকে দেখা মাত্র হত্যা করেন। তারপরে অশ্বত্থামা দ্রৌপদীর পাঁচ ঘুমন্ত পুত্রকে, শিখণ্ডী ও অন্যান্য পাণ্ডব বীরদের হত্যা করেন। উল্লেখ্য, এই সময় পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ গঙ্গাতীরে অবস্থান করছিলেন। তারা এই খবর পেলে অশ্বত্থামা পলায়ন করেন। পুত্রশোকাহত দ্রৌপদীকে শান্ত করতে তাকে যেকোনো প্রকারে বধ করতে যান অর্জুন। তাদের দেখে অশ্বত্থামা শক্তিশালী ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করলে অর্জুন বাধ্য হন ব্রহ্মশির দিয়ে ব্রহ্মশির প্রতিরোধ করতে। বাসুদেবের মধ্যস্থতায় বিপর্যয় নিবৃত্ত হয় কিন্তু সেটা গিয়ে উত্তরার গর্ভে থাকা সন্তানের উপর পড়ে।

অশ্বত্থামার শাস্তি

অশ্বত্থামার এই পাপের সাজা হিসেবে তার কাছ থেকে শ্রীকৃষ্ণ তার মাথার মনিটি কেড়ে নেন। যা ছিল তার বীরত্ব ও গৌরবের প্রতীক। অভিশাপ দেন যে কখনো অশ্বত্থামার মৃত্যু হবে না। অশ্বত্থামা চাইলেও কোনদিন মৃত্যুবরণ করতে পারবেন না। আজীবন অমর থাকবেন। এই ঘটনার পর অশ্বত্থামাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। তিনি মনিহারা শৌর্যহারা হয়ে চলে যান।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন