বাঙ্গালির
খাদ্য তালিকায় বিশেষ করে নাস্তায় সিঙ্গাড়া একটি অতি পরিচিত নাম। কিন্তু আমরা ক’জন জানি
এই অসাধারণ খাদ্যবস্তুটির জন্ম বৃত্তান্ত? ইন্টারনেটে সিঙ্গাড়া তৈরি বা সিঙ্গাড়া আবিষ্কার
সম্পর্কে বেশকিছু মজার কাহিনী ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদ সেটি
হল:
১৭৬৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের
রাজপ্রাসাদের প্রধান রাধুনী গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবীই প্রথম বাংলায়
সিঙ্গাড়ার প্রচলন করেছিলেন। এই গিরীধারী হালুইকরের পিতা গুণীনাথ হালুইকরের আদি নিবাস
ছিলো ওড়িষ্যায়। ঘটনাটি এমন যে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন প্রচন্ড মাত্রায় ভোজন রসিক
এবং লুচি তরকারী ছিল তার খুব প্রিয়। তো তিনি যতবার খাবার চেয়ে পাঠাতেন দেখা যেত তার
কাছে লুচি তরকারী পৌছতে পৌছতে ঠান্ড হয়ে যেত। এতে মহারাজ একদিন ভীষণ রেগে যান এবং প্রধান
রাধুনী গিরীধারীকে শূলে চড়িয়ে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন। গিরীধারী অনেক অনুনয়-বিনয়
করে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড রোধ করেন। এরপর তার প্রতি নির্দেশ হয় তিন দিনের মধ্যে তাকে
রাজ্যত্যগ করতে হবে।
গিরীধারী’র স্ত্রী এই কথা শুনে ঠিক করেন দেশত্যাগের
পূর্বে একবার রাজার সাথে দেখা করবেন। পরদিন সকালে গিরীধারীর স্ত্রী ধরিত্রী দেবী রাজ
সভায় গিয়ে রাজাকে প্রণাম করে জানান যে তিনি এমনভাবে লুচি তরকারী তৈরি করতে পারেন যা
আধাঘন্টা পরে খেলেও গরম থাকবে। এমনি কি এই খাবারটি সঙ্গে সঙ্গে খাওয়াই বরং অসম্ভব হবে।
এ কথা শুনে মহারাজ খুব কৌতুহলী হয়ে ধরিত্রী
দেবীকে পাকশালায় প্রেরন করেন। ধরিত্রী দেবী লুচির জন্য তৈরি সাধারণ তরকারী ময়দা বেলে
তার মধ্যে পুরে দিয়ে সমভূজ আকারের ত্রিকোণাকার দিয়ে প্রস্তুত করে রাখেন। এরপর কড়াইতে
ঘি গরম করে তার মধ্যে বস্তুগুলো ছেড়ে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো ভাজা হয়ে গেলে
চমৎকার সোনালী রঙ ধারণ করে এবং স্বর্ণের থালায় সেগুলো সাজিয়ে রাজসভায় নিয়ে যান। রাজা
সেই অদ্ভুত আকৃতির খাবার দেখে খুশি হয় এবং শোনা যায় খাবারটি খাওয়ার পর তিনি কোন প্রকার
প্রশংসা না করে নিজের গলায় পরিহিত মুকার মালা খুলে ধরিত্রী দেবীকে উপহার দেন।
পরবর্তীতে রাজা খাদ্যবস্তুটির নাম জানতে চাইলে
ধরিত্রী দেবী জানান এটির নাম ‘সমভূজা’। এই সমভূজা’ই পরবর্তীতে পরিবর্তন হয়ে সমুচা নাম
ধারণ করে। উল্লেখ্য স্থানভেদে অনেকে সিঙ্গাড়াকে ‘সমুচা’ বলে থাকেন। বাংলাদেশে সমুচা
নামে সিঙ্গাড়া’র চেয়ে কিছুটা আলাদা খাদ্যবস্তু পাওয়া গেলেও অনেক স্থানে সিঙ্গাড়াকে
সমুচা বলা হয়। এই সমুচা মূলত সিঙ্গাড়া’ই অন্য একটি রূপ। অনেকে মনে করেন, সিঙ্গাড়া নামটি
হিন্দি শব্দ সিঙ্ঘাড়া থেকে এসেছে। আমরা যেটাকে পানিফল নামে চিনি হিন্দিতে সেটিকে সিঙ্ঘাড়া
বলা হয়। যেহেতু পানিফল দেখতে অনেকটাই সিঙ্গাড়া’র মত তাই এই মতবাদটি সর্বজনগ্রাহ্য বলে
বিবেচিত হয়।
তবে
উইকিপিডিয়া’র তথ্য অনুযায়ী সিঙ্গাড়া শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে ফার্সি শব্দ ‘সংবোসাগ’ থেকে।
মধ্য প্রাচ্যে প্রথম সামুচা বা এই সিঙ্গাড়ার উৎপত্তি হয় এবং ক্রমেই তা পাকিস্তান, ভারত
বাংলাদেশ এমনি কি চীনেও ছড়িয়ে পড়ে। পারস্যের কবি ইসহাক আল-মাওসিলির নবম শতাব্দীর একটি
কবিতায় সমোসার প্রশংসনীয় পাওয়া যায়। আমির খুসরো (১২৫৩-১৩২৫), একজন আলেম এবং দিল্লি
সুলতানিয়ের রাজকবি, প্রায় ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে লিখেছিলেন যে -রাজকুমারগণ ও আভিজাত্যরা
“মাংস, ঘি, পেঁয়াজ ইত্যাদিতে প্রস্তুত সামোসা উপভোগ করেন।”
আবার
ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতে ২ হাজার বছর আগে সিঙ্গারার আবির্ভাব হয়েছিল। তবে তখন সিঙ্গাড়ার
মধ্যের আলুর ব্যবহার ছিল না। ১৬ শতকে পর্তুগিজরা যখন এ দেশে আলুর ব্যবহার শুরু করার
পর থেকে সিঙ্গারার মধ্যে আলু দেওয়ার রীতি চালু হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন