মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা কিছুতেই সহ্য করা হবে না



অনেক অনেককাল আগের কথা, সুবিচার নামে এক দেশ ছিল আর সেই দেশের রাজার নাম ছিল সুশাসক। একবার সেই দেশের এক গৃহস্থের বাড়িতে চুরি হল। চোর শাবল দিয়ে মাটির দেয়াল ফুটো করে ঘরে ঢুকে সকল মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেলো। বাড়ির মালিক রাজ দরবারে গিয়ে বিচার চাইলেন। সবশুনে রাজা তার এক মন্ত্রীকে পাঠালেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। মন্ত্রী চুরি যাওয়া বাড়িতে গেলেন, সব দেখলেন তারপর বাড়ির মালিকের কাছে কিছু উৎকোচ দাবী করলেন। ঘর থেকে সব চুরি যাওয়ায় মাড়ির মালিকের কাছে আর কোন অর্থ ছিল না। এ কথা মন্ত্রী মশাইকে জানাতেই তিনি ভীষণ ক্ষেপে গেলেন এবং রাজার কাছে গিয়ে জানালেন, “মহারাজ, সব দোষ এই বাড়ির মালিকের। বাড়ির মালিক রাতে যথেষ্ঠ সতর্ক ছিল না, বাড়ির দেওয়ালও জরাজীর্ণ, মজবুত না। এই বাড়ি দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। চোর যখন দেয়াল ফুটো করে চুরি করছিল তখন ঐ জরাজীর্ণ দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে চোরের মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল তাই প্রথমে বাড়ির মালিকের বিচার হওয়া উচিৎ।


এ কথা শুনে রাজার তো আতঙ্কের সীমা রইল না। রাজা ভাবলেন সত্যিই তো যদি দেয়াল চাপা পড়ে চোরের মৃত্যু হতো, তাহলে কি সর্বনাশটাই না তো! তার রাজ্যে মানুষ খুন! রাসা সাথে সাথে হুংকার দিলেন, “এখনই বাড়ির মালিককে ধরে আনো, এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সঙ্গে সঙ্গে রাজকর্মচারীরা রাজার নির্দেশ বাস্তবায়ন করলেন।

রাজ্যের যারা বিরোধীদল ছিল, তারা এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করলেন। তারা ঘোষণা করলেন, এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী রাজা স্বয়ং নিজে। বিরোধীদলকে চাপে রাখতে রাজা নিজের লোক দিয়ে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা উদাহরণ টেনে জনগণকে এটা বোঝাতে সমর্থ হলেন যে, তাদের শাসনামলে অসংখ্য ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এমনভাবে দেয়াল ফুটো করে চুরির ঘটনা একটাও ছিল না। বর্তমান প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ।

এই রাজ্যে আবার বিশেষ শ্রেণির একদল বুদ্ধিজীবি ছিল। তারা মত প্রকাশ করলেন, এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী মূলত শাবল নির্মাতাগণ। যদি দেশে শাবল না থাকত তাহলে চোর দেয়াল ফুটো করার জন্য শাবল পেতো কোথায়? সরকারের উচিত এই কর্মকার অর্থাৎ কামার শ্রেণিকে দেশ থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করা।

কিছু মানুষ অবশ্য বলেছিলেন, রাজ্যের প্রহরীরা যথেষ্ঠ সতর্ক নয় এবং মন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্থ। কিন্তু মহারাজ তাদের কথায় পাত্তা দেননি। উপরন্তু প্রহরীরা কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর আক্রমণও করে বসলেন।  

এই পর্যন্ত পড়ার পর যদি কোন পাঠকের উক্ত উন্মাদ চরিত্রগুলোর কর্মকাণ্ডে হাসি পায় তাহলে বলব আপনার রসবোধের অভাব আছে। এরচেয়েও উন্মাদগ্রস্থ, দুই পা বিশিষ্ট প্রাণী সমৃদ্ধ একটি দেশ পৃথিবীতে আছে। সে দেশে শুধুমাত্র ফেসবুকে অজানা, অচেনা কোন ব্যক্তির পোস্ট করা একটিমাত্র ছবি দেখে কোন কিছু যাচাই-বাচাই না করেই শত শত নিরীহ মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে তাদের সম্পদ লুটপাট করতে ছুটে যায় সেই উন্মাদগ্রস্থরা। এখানেই শেষ নয়, এই উন্মাদগ্রস্থদের দাবি, তাদের পবিত্র গ্রন্থের অবমাননা তারা কিছুতেই মেনে নেবে না। যেভাবেই হোক তারা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করেই ছাড়বে। শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন হলে তারা সকল পবিত্র গ্রন্থ অবমাননাকারীদের জ্যন্ত পুড়িয়ে মারবে।

প্রেক্ষাপট-১: কুমিল্লায় দূর্গাপূজার মন্দিরে প্রতিমার পায়ের উপর কোরয়ান শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে উন্মত্ত জনতার পুজামন্দিরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ।

প্রেক্ষপট-২: প্রেক্ষপট-১ এর ছবি ফেসবুকে দেখে রংপুরে হিন্দু গ্রামে অগ্নি সংযোগ ২ শতাধিক ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ছারখার।








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন