মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

টেনিদা-নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যয়

 

টেনিদা-বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসাত্বক চরিত্রগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম। খাঁড়ার মত নাকওয়ালা টেনিদা আর তার চার বন্ধু (বন্ধু না বলে অবশ্য চ্যালা বললেই মানায় ভাল) পটলডাঙ্গার প্যালারাম, ঢাকাইয়া হাবুল সেন এবং পড়াশুনায় দারুণ ভালো ক্যাবলাকে নিয়েই টেনিদার প্রায় প্রতিটি গল্প।

সাড়ে ছয় হাত লম্বা, বাজখাই গলা, মৈনাকের মত নাক এবং গড়ে মাঠে গোরা ঠ্যাঙিয়ে নাম কুড়ানো মস্ত পালোয়ান টেনিদা মেট্রিকে ছয়বার ডিগবাজি খেয়ে সপ্তম বারে পাশ করে। অবশ্য এটা তার জন্য বিন্দুমাত্র আফসোসের বিষয় নয়। বরং তিনি মনে করেন পাশ করাতে কোন বাহাদুরি নেই, দু’পাতা বিদ্যে পড়ে কত ছেলেই পাশ করে যাচ্ছে টকাটক। খাতা ভরে লেখার পরেও টেনিদাকে কেউ পাশ করাতে পারছে না, সেখানেই তার কৃতিত্ব। খাওয়ার ব্যপারে কাপুরুষতা টেনিদা একদমই পছন্দ করে না বরং অন্যকে ভুলিয়ে ভালিয়ে, ভয় দেখিয়ে কিংবা কেড়ে নিয়ে নিজের উদরপূর্তিতে যার কোন জুড়ি নেই। তার বিখ্যাত সংলাপ, “ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক”।

পটলডাঙ্গার প্যালারাম সারাবছর পালাজ্বরে ভোগে আর পটল দিয়ে শিং মাছের ঝোল খায়। সেও লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো না। দুই বছর ফেল করে তার কান বেড়েছে আধা হাত।

ঢাকাইয়া টানে কথা বলা হাবুল সেন সবসময় খাটি কথা বলতে ওস্তাদ। পড়াশুনায়ও মোটামুটি ভালো।

চারমূর্তির আরেকজনের নাম ক্যাবলা। নামে ক্যাবলা হলেও পড়াশুনায় ভীষণ ভালো ছাত্র, প্রতি ক্লাসে সে প্রথম হয়, মেট্রিকে রয়েছে বৃত্তি।

টেনিদা সিরিজের প্রায় প্রতিটি গল্পে আর যে নামটি বার বার উঠে এসেছে তা হল চাটুজ্যেদের রোয়াক। এখানে বসেই চলে চারমূর্তির সকল আড্ডা, গল্প এবং যত প্রকার দুষ্টুমি। টেনিদা’র গল্পগুলো এই চার মূর্তির প্যালারামের জবানিতেই প্রকাশ পেয়েছে। গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠক তার মাধ্যমে বের মজার মজার তথ্য জানতে পারে। গল্পে টেনিদার আসল নাম ভজহরি মুখার্জি, হাবুলের স্বনেন্দু সেন, ক্যাবলার কুশল মিত্র এবং প্যালার কমলেশ ব্যানার্জি।

চারমূর্তির বর্ণনা দিয়ে মজার এক গানও আছেঃ

আমরা চার মূর্তি, মনে খুব ফুর্তি

আমরা পটল ডাঙার...

টেনিদার বুদ্ধি, যেন মুখ শুদ্ধি

সাবাস লিডার...

চারজন আমরা, দেইনা ত বাগড়া

মানুষের ভালো কাজে...

পটল ডাঙার নাম ছড়াবোই ছড়াবো

এই কলকাতাতে। 

অসাধারণ এই কাহিনীগুলোর স্রষ্টা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যয়। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যয়ের জীবনী খুজতে গিয়ে তার সম্পর্কে বেশ মজার তথ্য জানা গেল। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যয়ের প্রকৃত নাম তারকনাথ, জন্ম বাংলাদেশের দিনাজপুরে এবং তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ভারতীয় বাংলা চলচিত্রের অত্যন্ত বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যয় তার ছাত্র ছিলেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন