বুধবার, ১৩ মে, ২০২০

আমার প্রিয় শখ


ভূমিকা: এ পৃথিবীতে প্রত্যেক লোককে জীবিকা অর্জন করতে হয়। ব্যয় করতে হয় প্রচুর পরিশ্রম। এ জীবিকা অর্জনের জন্যে যে কাজ করতে হয় তার ফাঁকে ফাঁকে মনকে বিকশিত করার জন্যে কিছু একটা করতে ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা জাগে। এ ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষাকে শখ বলে। তাই প্রত্যেক মানুষের মন ও স্বাস্থ্যকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার জন্যে কোনো না কোনো শখ হয়। জীবিকা অর্জনের জন্যে একটানা কাজ করতে করতে একসময় জীবনটাই নিরানন্দ হয়ে যায়। কিন্তু শখের কাজ করলে নিরানন্দের মধ্যে আনন্দ ও নতুন উৎসাহ পাওয়া যায় 


বিচিত্র শখের পরিচয়: পৃথিবীতে বৈচিত্র্যময় শখ আছে। একেক জনের একেক রকমের শখ। অনেক রকমের শখের মধ্যে ঘুড়ি উড়ানো, ডাকটিকিট সংগ্রহ করা, গান গাওয়া বা শোনা, ছবি সংগ্রহ করা, দেশ ভ্রমণ করা, খেলাধুলা করা ইত্যাদি ছাড়া আরও শখ আছে। যেমন- মাছ ধরা, সিনেমা দেখা, ছবি আঁকা। আবার কেউ কেউ লেখার নেশায় ডুবে থাকতে ভালোবাসে।
শখের নানা দিক: অনেকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করা, মাছ ধরা, ঘুড়ি উড়ানো, খেলাধুলা করা ইত্যাদি প্রিয় শখ হিসেবে ধরে নিলেও আমি এসবকে আমার প্রিয় শখ হিসেবে ধরে নিতে পারি না। এসব শখের মাঝে যেমন সুবিধা আছে তেমনি অসুবিধাও আছে। যেমন- মাছ ধরার কথা বলা যাক। মাছ ধরায় প্রচুর আনন্দ আছে। কিন্তু মাছ ধরতে প্রচুর সময় ব্যয় হয় যা এক জন ছাত্রের জন্যে মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। অন্যদিকে ঘুড়ি উড়ানোর দিকে যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখা যাবে সেখানে অনেক বিপত্তি। অনেক সময় দেখা যায় ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আহত হচ্ছে। অথবা মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। ডাকটিকিট সংগ্রহ করা একটি উত্তম শখ; এর ফলে দেশ-বিদেশ সম্পর্কে নানারকম তথ্য পাওয়া গেলেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। অতএব আমি বলতে পারি, শখের কাজ প্রায়ই ভালো কিন্তু যে শখ আমাদের কাজে ক্ষতি করতে পারে তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। শখের কাজকে নিতান্ত শখ হিসেবে বিবেচনা করাই শ্রেয়। শখের বশে যেন কর্তব্য ও কর্মের ক্ষতি না হয় তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত। ব্যক্তিগত শখ প্রাপ্তির পদ্ধতিগত উপায় যেন অন্যের বিরক্তির বিষয় হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে অধিক সচেতন হওয়া আবশ্যক।
আমার শখ: পৃথিবীতে সুন্দর সুন্দর শখের মাঝে আমারও একটি শখ আছে। আর আমার সেই শখটি হলো বাগান করা। সব দিক বিবেচনা করে দেখা যাবে বাগান করার মধ্যেই সব চেয়ে আনন্দ বেশি। যদিও খেলা করা, ঘুড়ি উড়ানো, ডাকটিকিট সংগ্রহ করা ভালো লাগে তবুও বাগান পরিচর্যা করার মধ্যে আমি বেশি আনন্দ পাই। ছোছোট ফুলের চারাগুলো যত্ন করে বড়ো করে তুলে তাতে ফুল ফোটানো কত যে আনন্দের ব্যাপার তা বুঝিয়ে বলা মুশকিল। নিজ হাতে গড়া বাগানে যখন ফুল ফুটে তা দেখে নিজের বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে। তখন অন্যের কেমন লাগে তা আমি জানি না। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই।
শখের কারণ: যেহেতু আমি একজন ছাত্র, সেহেতু আমার জীবনের পরিধি এখনও বিস্তার লাভ করে নি। আমি ছাত্র হলেও আমার কর্তব্য রয়েছে। আমাকে প্রতিদিন ক্লাসের পড়া তৈরি করতে হয়। আবার নিজের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রেখে শরীরচর্চা করতে হয়। সুতরাং নানা বৈচিত্র্যময় শখের মধ্যে বই পড়াকে আমি বেছে নিতে পারতাম এবং আমি ছাত্র হওয়ায় তারই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি যেহেতু ছাত্র সুতরাং আমার বই পড়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। একজন ছাত্র না পড়লে তার ছাত্রত্ব টিকে থাকে না। তাই বই পড়া যেহেতু আমার জন্যে বাধ্যতামূলক সেহেতু বই পড়াকে আমি শখ হিসেবে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। আমরা আগেই জেনেছি শখ শুধুই শখ, এ থেকে যেন আনন্দ পাই সেদিকেই আমাদের বেশি খেয়াল রাখতে হবে। পাঠ্য বই পড়া ও শখ হিসেবে বই পড়া দুইটি একত্রে মিলে এক তিক্তকর ব্যাপার হতে পারে। কিন্তু বাগান করার ফলে পড়ার পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিতে পারছি। তারপরও লেখাপড়ার গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে বাগানে গিয়ে মনকে হালকা করার একটি সুযোগ পাওয়া যায়। তাই আমি বাগানকে আমার শখ হিসেবে নিয়েছি।
গুরুত্ব: আমার বাগানটি করার আগে আমি সবদিকে খেয়াল রেখেই করেছি। অনেক ভেবে-চিন্তে বাগানটি আমার পড়ার রুমের পাশে করেছি। বাগান করার আগে এ জায়গাটুকু পতিত ছিল। আমি এ জায়গা পরিষ্কার করে বাঁশের চটা দিয়ে শক্ত করে বেড়া দিয়েছি। একটা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগলা করে একটি মুগুড় দিয়ে মাটির ঢেলাগুলো পিটিয়ে ঝুরঝুরে করেছি। আমি এ কাজের ব্যাপারে আমার আব্বার কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা, উৎসাহ ও নির্দেশনা পেয়েছি। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে নানারকম ফুলের চারা এনে আমার বাগানে রোপণ করেছি। প্রথম দিকে আমার বাগান সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। কিন্তু এখন আমি অনেক দিক থেকেই দক্ষ। বাগান করার আগে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। কিন্তু এখন ফজরের আযানের সাথে সাথে ঘুম ভেঙে যায়। নামাজ পড়ে বাগানে চলে যাই। সেখানে ছোটখাট যা যত্ন করার দরকার তা দ্রুত সেরে আমার পড়ার রুমে চলে যাই। বাগান করার আগে আমি রাস্তাঘাটে দেরি করতাম। কিন্তু এখন এ বাগানের টানে মন শুধু বাসায় চলে যায়। প্রতিদিন ক্লাস থেকে এসেই আগে বাগানের যত্ন নেই। পর অন্য কাজে যাই। আর কোনো জায়গায় নতুন চারা পেলে তো কথাই নেই।
উপসংহার: ‘শখ’ শব্দের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। এ শখ আমাদের জীবনব্যবস্থার একঘেঁয়েমির মাঝে আনন্দ দেয়। পৃথিবীতে এমন কোনো লোক নেই যে তার মাঝে কোনো শখ নেই । এ শখ এমন হওয়া উচিত যা জীবনকে শান্তি এবং বিনোদন দিতে পারে। আর যদি শখ অশান্তির কারণ হয় তবে, সমাজ, জাতি এবং নিজের জন্যেও ক্ষতিকর। তাই আমাদের জীবনের সাথে সম্বন্ধ রেখে শখ করা উচিত।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন