Advertisement

Responsive Advertisement

বৃষ্টিতে ভেজার বয়স- সমারেশ মজুমদার

 


বৃষ্টিতে ভেজার বয়স

প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই হতাশ হয়েছিলাম। সেই হতাশা থেকে আর বের হতে পারিনি। কিছুটা পড়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, যেন শেষ করতে পারলেই বাঁচি। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কুহেলী, ছয় সন্তানের জননী এবং পঞ্চাশোর্ধ বয়সী হয়েও অসাধারণ সুন্দরী। উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায় কুহেলী সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে সম্পূর্ণ অনাবৃত শরীর নিয়ে। বর্ণনা করা হচ্ছে এই বয়সেও কুহেলীর দেখতে কতটা অপরূপ, তার। এরপর বর্ণনা করা হয়েছে কুহেলীর স্বামীর কর্মকান্ড। কুহেলীর স্বামী ছিলেন সম্পূর্ণই নারীলোভী একজন মানুষ যার কাছে ভালোবাসা বলে কিছুই পায়নি কুহেলী। স্বামীর মৃত্যুর পর তাই কুহেলী ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বড় ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রথমে তার জীবনে আসলো লেখক শোভন। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল শোভনও আসলে তাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে তার শরীরকে। 

এরপর একে একে আরও কয়েকজন পুরুষের সংস্পর্শে যায় কুহেলী। তারা প্রত্যেকেই কুহেলীর শরীরকে ভোগ করতে চায়। লেখক এখানে পুরুষ মাত্রই নারীলোভী এমন একটা ব্যপার প্রমাণ করতে চেয়েছেন। অবশ্য একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নারী চরিত্রগুলোর মধ্যেও পুরুষকে আকর্ষণ করা বা কোন ক্ষেত্রে পুরুষককে ভোগ করার অভিপ্রায় দেখা যায়। কাম এবং অর্থই যেন চরিত্রগুলোর মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। কুহেলীর ছোট মেয়ে পাখী যে কিনা সিনেমায় অভিনায় করার স্বপ্ন দেখে, একদিন সেও মায়ের প্রেমিকা শোভনের কাছে গিয়ে বলে, "আমাকে সিনেমায় সুযোগ পাইয়ে দেয়ার বদলে আপনি আমার সাথে যা ইচ্ছা করতে পারেন।”

কুহেলীর বান্ধবী শিবানী, যার স্বামী জাহাজে চাকুরী করেন। ছয়মাস বাড়ির বাইরে থাকেন। এই ছয়মাস সে বাড়ির বাইরে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গ উপভোগ করে বেড়ায়। কুহেলী নিজেই তার বড় মেয়েকে স্বামীর ব্যবসায়ীক পার্টনারের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেয় শুধুমাত্র অর্থের লোভে। 

এক পর্যায়ে কুহেলীর সাথে পরিচয় ঘটে ফ্রান্স নিবাসী রুদ্র নামে এক ভদ্রলোকের সাথে। এই লোকটা কুহেলীকে স্বপ্ন দেখায় ব্যবসার মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জনের। কিন্তু তার আচরণে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি উপন্যাসের শেষটা কি হতে যাচ্ছে। আমার প্রেডিকশন একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। এই রুদ্র টাকা মেরে দিয়ে এবং কুহেলীকে চরমভাবে ভোগ করে (বলা যায় ধর্ষণ করে) পালিয়ে যায়। হাসপাতালে দীর্ঘদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে কুহেলী বেঁচে ফেরে কিন্তু হারিয়ে যায় তার সৌন্দর্য, বুড়িয়ে যায় সে। যারা তাদের ব্যবসায় ইনভেস্ট করেছিলেন তারা আন্দোলন শুরু করে। কুহেলী, তার বড় মেয়ে সুজাতা এবং জামাই অমিয়ের পালানোর পথ নেই!  

যেটা আমি প্রেডিক্ট করতে পারিনি তা হলো, পালানোর পূর্বে রুদ্র কিছু টাকা ব্যাগে পার্সেল করে কুহেলীকে ফেরত দেয়। এই টাকা দিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ