বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

বই কেন পড়ব?

বই পড়া (ছবি-ইন্টারনেট)

‘একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কি?’-এই প্রশ্নের জবাবে প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিতে পারেন। আমি মনে করি মানুষের জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ‘নিজেকে জানা’। একজন মানুষ তখনই সফল হয় কিংবা তার জীবনের লক্ষ্য পূরন করতে সমর্থ হয় যখন সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে বুঝতে পারে। আজ থেকে প্রায় আড়াইহাজার বছর পূর্বে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, “To know thyself is the beginning of wisdom.” অর্থাৎ “নিজেকে জানাই হ’ল জ্ঞানের শুরু।” সুতরাং একজন মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজেকে জানতে বা উপলব্দি করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে তার ভিতরে জ্ঞানের শুরুই হয় না।
       নিজেকে জানার এই সুকঠিন কাজটি একেবারেই সহজ হয়ে যায় বই পড়ার মধ্য দিয়ে। যারা শুধুমাত্র শিরোনাম দেখে এই লেখাটি পড়া শুরু করেছিলেন তারা চাইলে এখানেই থেমে যেতে পারেন কেননা “বই কেন পড়ব?”—এই প্রশ্নের উত্তরে আমার বক্তব্য এটাই। হ্যা, আমি মনে করি, বই পড়লে মানুষ নিজেকে জানতে পারে। তাহলে কি নিজেকে জানার পর আর বই পড়ার প্রয়োজন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর হল,  নিজেকে জানার আসলে কোন শেষ নেই। একজন মানুষের মধ্যে কি প্রতিভা লুকিয়ে আছে কিংবা সে কি করতে পারে, তা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে জানার চেষ্টা করতে পারে। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের বই পড়ে যাওয়া উচিত।
       বই এমন একটি শক্তি যা একজন মানুষকে আলোকিত করে। বই মানুষের ভিতরের সকল অজ্ঞনতা দূর করে জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে। এবং একবার যার ভিতর এই আলো প্রজ্জ্বলিত হয় সে আর কখনই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় না—বই পড়ার এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।  
       বই আমাদেরকে শুধুমাত্র নতুন কিছু জানতে সাহায্য করে তা-ই নয়, বরং বই আমদের কল্পনাশক্তিকে বৃদ্ধি করে। বই মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। বই আমাদেরকে নতুন কিছু করতে উদ্ভুদ্ধ করে। একজন মানুষ যখন বই পড়ে তখন সে লেখকের চিন্তার সাথে মিশে যায়। বইয়ের কাহিনী বা চরিত্রের সাথে পাঠক নিজের জীবনের বা চারপাশের পরিবেশের সাদৃশ্যতা খুজে পায় এবং এভাবেই তার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়।
আমাদের তরূণ প্রজন্মের একটা বৃহৎ অংশ আজ হতাশ, অবসাদগ্রস্থ, দিশেহারা। ফেসবুক বা অন্যকোন স্যোসাল মিডিয়ায় অন্যের অর্থহীন সমালোচনা, অশ্লীল গালিগালাজ করে করে এরা স্বস্তি খুজে পায়। আজকের দিনের সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ অবশ্যই বই না-পড়া। এই বিধ্বস্ত প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে পারে বই। আমরা যত বেশি নতুন প্রজন্মমের হাতে বই ধরিয়ে দিতে পারব ততই মঙ্গল।  
       এখন প্রশ্ন হচ্ছে বই পড়ার গুরুত্ব যদি এতই বেশি তাহলে প্রত্যেকে কেন বই পড়েনা? এর উত্তর খুবই সহজ, এর কোন নগদ প্রাপ্তি নেই। অর্থাৎ সারাদিন বই না পড়ে আপনি যদি একবেলা মাঠে কাজ করতে যান তাহলে আপনার কিছু নগদ অর্থ প্রাপ্তি ঘটবে। আমরা সবসময় এই নগদ প্রাপ্তিটাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু যারা মাঠে কাজ করতে যান দিনশেষে তাদেরকে ঐ সামান্য প্রাপ্তি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। অপরদিকে বই মানুষের ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে এবং পৃথিবীতে আজ যেসমস্ত জাতি উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে তাদের পেছনে অবদান রেখেছেন তাদের বই পড়ুয়া মানুষগুলো। তাই আগামী পৃথিবীর কথা চিন্তা করে আমাদের প্রচুর বই পড়তে হবে। প্রথম চৌধুরির ভাষায় “জ্ঞানের ভান্ডার যে ধনের ভান্ডার নয় এ সত্য তো প্রত্যক্ষ। কিন্তু সমান প্রত্যক্ষ না হলেও সমান সত্য যে, এ যুগে যে জাতির জ্ঞানের ভাণ্ডার শূন্য সে জাতির ধনের ভাঁড়েও ভবানী।
       তাই আসুন আমরা সকলে বই পড়ি এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি। যারা এই পর্যন্ত ধর্য্যসহকারে লেখাটি পড়েছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন