বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কবি-তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয়


আপতদৃষ্টিতে গল্প খুবই ছোট এবং সরল। হিন্দু সমাজের পতিততম স্তরের অন্তর্গত ডোম সম্প্রদায়ের সন্তান নিতাই যার পূর্বপুরুষরা কেউ ছিল ভয়ংকর ডাকাত কেউ বা সিধেল চোর। এমন বংশের ছেলে নেতাই কিনা হয়ে গেল কবিয়াল। ঘটনা তখনও অতটা প্রচার পায়নি। সেবার তাদের গ্রামের বাৎসরিক কবিগানের আসরে নির্ধারিত কবিয়াল নোটন টাকার লোভে অন্যত্র পালিয়ে গেলে নেতাইয়ের ভাগ্য খুলে যায়। তর্কযুদ্ধে মহাদেব কবিয়ালের কাছে হেরে গেলেও আশেপাশের পাঁচগ্রামের মানুষ নেতাইকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছিল তার বন্ধু রাজনের শ্যালিকা যাকে তারা ঠাকুরঝি নামে ডাকত।

ঠাকুরঝি'র কালো রঙে মজে গিয়ে কবি নেতাই লিখে ফেলল, "কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁন্দ কেনে"। ক্রমেই যখন সে ঠাকুরঝি'র প্রেমে ডুবে যাচ্ছে তখনই আবির্ভাব ঘটে এক ঝুমুরদলের। এই ঝুমুরদলের নর্তকী বসন্তের সাথে তার এক তিক্তমধুর সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর সেই দলের সাথেই সে এখানে সেখানে কবিগান গেয়ে বেড়াতে থাকে।

বসন্তের সাথেই সে গাঁটছড়া বাঁধে। কথা হয়- তাদের কেউ একজন ঝরে না পড়া অবধি এ গাঁটছড়া ছিঁড়বে না। শেষ পর্যন্ত কালব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অসময়েই ঝরে যায় বসন্ত। বিবাগী হয়ে পথে পথে ঘুরে কাশী ঘুরে নেতাই ফেরে তার নিজ গ্রামে। গ্রামে এসে পায় বিপুল সংবর্ধনা। সকলের অপরিসীম ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় সিক্ত হয় নেতাই। কিন্তু ঠাকুরঝি নেতাইয়ের বিরহে হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য- এই খবর তার সকল আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।

উপন্যাসটি পড়ার পর এক অন্যরকম ভালোলাগার শিহরণে বার বার শিহরিত হয়ে উঠছে মন। মনে হচ্ছে যেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয় তার হৃদয়ের সবটুকু আবেগ, সবটুকু ভালোবাসা একেবারে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন কবি'র প্রতিটি বাক্যে, শব্দে, বর্ণে। এমন অপূর্ব আবেগময় কাব্যগাঁথা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আলো দিয়ে যাবে অনন্তকাল ধরে। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন