ভূমিকা:
মানুষ আশা-আকাঙ্ক্ষা,
স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। শৈশব-কৈশোরে মনের মধ্যে যেসব
স্বপ্নের বীজ প্রোথিত হয়, তার সবই
জীবনে বাস্তবায়িত হয় না। সকলের জীবনেই সমানভাবে সাফল্য আসে না; কারও জীবন
কানায় কানায় পূর্ণতা পায় আর কারও জীবনে কোন
স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষার আংশিক প্রতিফলন ঘটে। তারপরও প্রত্যেক মানুষেরই নিজের জীবন
সম্পর্কে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা দরকার। সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মধ্যে নাবিক যেমন
ধ্রুব-নক্ষত্রকে লক্ষ্য করে উত্তাল জলরাশি পাড়ি দেয়; তেমনি
মানবজীবনের শৈশবেই লক্ষ্য স্থির করে নিয়ে জীবন নামের এ মহাসমুদ্র পাড়ি দিতে হয়।
প্রত্যেক মানুষের উচিত শৈশবেই নিজের জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিয়ে সংসার-সমুদ্র
পাড়ি দেয়া।
বুধবার, ১৩ মে, ২০২০
অধ্যবসায়
ভূমিকা:
সাফল্য লাভের জন্যে প্রয়োজন সাধনা। সাধনার পথে থাকতে পারে পর্বত
পরিমাণ বাধা। বাধা অতিক্রম কৌশলে ভুল হতে পারে বার বার। তাই চেষ্টা চালিয়ে যেতে
হবে বহুবার, কারণ
মানুষেরই ভুল হয়। ভুল থেকেই মানুষের জীবনে নেমে আসে ব্যর্থতা। সমস্ত ভুলকে শুধরিয়ে
সাফল্য লাভের জন্যে ধৈর্য,
পরিশ্রম ও নিষ্ঠাসহকারে বারবার চেষ্টা বা সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায়।
অধ্যবসায় হচ্ছে মানুষের অন্যতম মানবীয় গুণ। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ পৃথিবী থেকে
‘অসম্ভব' কথাটি
বিতাড়িত করেছে।
বিক্রমাদিত্যের বত্রিশ সিংহাসন
সংস্কৃত ভাষায় মহাকবি কালিদাস রচিত ‘দ্বাত্রিংশৎ পুত্তলিকা’
যা বাংলায় ‘বত্রিশ সিংহাসন’ নামে পরিচিত। এই কাহিনীতে মূলত ৩২টি
পুতুলের মাধ্যমে রাজা বিক্রমাদিত্যর চরিত্রের দানশীলতা, ধৈর্য,
পরোপকারিতা এবং অবিচল সাহসের পরিচয় ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘দ্বাত্রিংশৎ পুত্তলিকা’ কালিদাসের একটি
অসাধারণ সাহিত্যকর্ম হলেও নীতিশাস্ত্র হিসাবেই বেশী সমাদৃত। গল্পের মধ্য দিয়ে নীতিশাস্ত্র
শিক্ষা দেওয়ার প্রচলন বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। ‘দ্বাত্রিংশৎ পুত্তলিকা’ও শিশুশিক্ষামূলক পুস্তক হিসাবে ভারতে
বহুল জনপ্রিয়। বত্রিশ সিংহাসনের কথা বলে হলেও আসলে কিন্তু সিংহাসন একটি। এই
সিংহাসন বিক্রমাদিত্য পেয়েছিলেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে। দেবরাজ ইন্দ্র বিশ্বমিত্র
মুনির তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য রম্ভা না উর্ব্বশী, কাকে পাঠাবেন অর্থাৎ দুজনের মধ্যে
কে শ্রেষ্ঠ সে বিচারের জন্য বিক্রমাদিত্যকে ডাকলেন স্বর্গে। বিক্রমাদিত্য দুজনের নৃত্য
পর্যবেক্ষণ করে শাস্ত্রজ্ঞান দ্বারা উর্বশীকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ
দেবরাজ ইন্দ্র বিক্রমাদিত্যকে বত্রিশটি পরী খচিত সিংহাসন উপহার দেন।
শনিবার, ৯ মে, ২০২০
নজরুল পত্নী প্রমীলা দেবী
কাজী
নজরুল ইসলামকে আমরা সকলেই চিনি। শুধুমাত্র আমাদের জাতীয় কবি হিসাবেই নয়, তিনি বিদ্রোহী
কবি, তিনি সাম্যের কবি, তিনি প্রেমের কবি, তিনি বিরহের কবি। কিন্তু তার জীবন সঙ্গিনী
প্রমীলা দেবী/ প্রমীলা নজরুল সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি আমরা? আজকের এই লেখায় আমি সেই
মহিয়ষী নারীকেই জানার চেষ্টা করব। এই লেখায় যেসব তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে তার কিছু নজরুলের
জীবনের উপর প্রকাশিত বই থেকে এবং কিছুটা ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা
হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০
বই কেন পড়ব?
বই পড়া (ছবি-ইন্টারনেট) |
‘একজন মানুষের
জীবনে সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কি?’-এই প্রশ্নের জবাবে প্রত্যেকে ভিন্ন
ভিন্ন উত্তর দিতে পারেন। আমি মনে করি মানুষের জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ
কাজ হচ্ছে ‘নিজেকে জানা’। একজন মানুষ তখনই সফল হয় কিংবা তার জীবনের লক্ষ্য পূরন করতে
সমর্থ হয় যখন সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে বুঝতে পারে। আজ থেকে প্রায় আড়াইহাজার বছর পূর্বে
গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, “To know thyself is the beginning of wisdom.”
অর্থাৎ “নিজেকে জানাই হ’ল জ্ঞানের শুরু।” সুতরাং একজন মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজেকে
জানতে বা উপলব্দি করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে তার ভিতরে জ্ঞানের শুরুই হয় না।
নিজেকে
জানার এই সুকঠিন কাজটি একেবারেই সহজ হয়ে যায় বই পড়ার মধ্য দিয়ে। যারা শুধুমাত্র শিরোনাম
দেখে এই লেখাটি পড়া শুরু করেছিলেন তারা চাইলে এখানেই থেমে যেতে পারেন কেননা “বই কেন
পড়ব?”—এই প্রশ্নের উত্তরে আমার বক্তব্য এটাই। হ্যা, আমি মনে করি, বই পড়লে মানুষ নিজেকে
জানতে পারে। তাহলে কি নিজেকে জানার পর আর বই পড়ার প্রয়োজন নেই? এই প্রশ্নের উত্তর হল, নিজেকে জানার আসলে কোন শেষ নেই। একজন মানুষের মধ্যে
কি প্রতিভা লুকিয়ে আছে কিংবা সে কি করতে পারে, তা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে
জানার চেষ্টা করতে পারে। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের বই পড়ে যাওয়া উচিত।
বই
এমন একটি শক্তি যা একজন মানুষকে আলোকিত করে। বই মানুষের ভিতরের সকল অজ্ঞনতা দূর করে
জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে। এবং একবার যার ভিতর এই আলো প্রজ্জ্বলিত হয় সে আর কখনই
অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় না—বই পড়ার এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
বই
আমাদেরকে শুধুমাত্র নতুন কিছু জানতে সাহায্য করে তা-ই নয়, বরং বই আমদের কল্পনাশক্তিকে
বৃদ্ধি করে। বই মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। বই আমাদেরকে নতুন কিছু করতে উদ্ভুদ্ধ করে।
একজন মানুষ যখন বই পড়ে তখন সে লেখকের চিন্তার সাথে মিশে যায়। বইয়ের কাহিনী বা চরিত্রের
সাথে পাঠক নিজের জীবনের বা চারপাশের পরিবেশের সাদৃশ্যতা খুজে পায় এবং এভাবেই তার অভিজ্ঞতা
সমৃদ্ধ হয়।
আমাদের তরূণ
প্রজন্মের একটা বৃহৎ অংশ আজ হতাশ, অবসাদগ্রস্থ, দিশেহারা। ফেসবুক বা অন্যকোন স্যোসাল
মিডিয়ায় অন্যের অর্থহীন সমালোচনা, অশ্লীল গালিগালাজ করে করে এরা স্বস্তি খুজে পায়।
আজকের দিনের সকল প্রকার সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ অবশ্যই বই না-পড়া। এই বিধ্বস্ত প্রজন্মকে
সঠিক পথ দেখাতে পারে বই। আমরা যত বেশি নতুন প্রজন্মমের হাতে বই ধরিয়ে দিতে পারব ততই
মঙ্গল।
এখন
প্রশ্ন হচ্ছে বই পড়ার গুরুত্ব যদি এতই বেশি তাহলে প্রত্যেকে কেন বই পড়েনা? এর উত্তর
খুবই সহজ, এর কোন নগদ প্রাপ্তি নেই। অর্থাৎ সারাদিন বই না পড়ে আপনি যদি একবেলা মাঠে
কাজ করতে যান তাহলে আপনার কিছু নগদ অর্থ প্রাপ্তি ঘটবে। আমরা সবসময় এই নগদ প্রাপ্তিটাকেই
গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু যারা মাঠে কাজ করতে যান দিনশেষে তাদেরকে ঐ সামান্য প্রাপ্তি
নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। অপরদিকে বই মানুষের ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে এবং পৃথিবীতে
আজ যেসমস্ত জাতি উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে তাদের পেছনে অবদান রেখেছেন তাদের বই
পড়ুয়া মানুষগুলো। তাই আগামী পৃথিবীর কথা চিন্তা করে আমাদের প্রচুর বই পড়তে হবে। প্রথম
চৌধুরির ভাষায় “জ্ঞানের ভান্ডার যে ধনের ভান্ডার নয় এ সত্য তো
প্রত্যক্ষ। কিন্তু সমান প্রত্যক্ষ না হলেও সমান সত্য যে, এ যুগে যে
জাতির জ্ঞানের ভাণ্ডার শূন্য সে জাতির ধনের ভাঁড়েও ভবানী।”
তাই
আসুন আমরা সকলে বই পড়ি এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করি। যারা এই পর্যন্ত ধর্য্যসহকারে
লেখাটি পড়েছেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বই পড়া-প্রমথ চৌধুরী
বই পড়া শখটা মানুষের
সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাইনে। প্রথম, সে পরামর্শ
কেউ গ্রাহ্য করবেন না;
কেননা, আমরা
জাত হিসেবে শৌখিন নই। দ্বিতীয়ত, অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবেন; কেননা, আমাদের এখন
ঠিক শখ করবার সময় নয়। আমাদের এই রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে সুন্দর জীবন
ধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সেই জীবনকেই সুন্দর করা, মহৎ করার
প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক এবং নির্মমও ঠেকবে। আমরা সাহিত্যের রস উপভোগ করতে
প্রস্তুত নই; কিন্তু
শিক্ষার ফল লাভের জন্য আমরা সকলে উদ্বাহু। আমাদের বিশ্বাস শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা
ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে। এ আশা সম্ভবত দুরাশা; কিন্তু তা হলেও আমরা তা ত্যাগ করতে
পারি নে। কেননা, আমাদের
উদ্ধারের জন্য কোনো সদুপায় আমরা চোখের সুমুখে দেখতে পাইনে। শিক্ষার মাহাত্ম্যে
আমিও বিশ্বাস করি এবং যিনিই যাই বলুন সাহিত্যচর্চা যে শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ সে
বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। লোকে যে তা সন্দেহ করে, তার কারণ এ শিক্ষার ফল হাতে হাতে
পাওয়া যায় না, অর্থাৎ
তার কোনো নগদ বাজার দর নেই। এই কারণে ডেমোক্রেসি সাহিত্যের সার্থকতা বোঝে না, বোঝে শুধু
অর্থের সার্থকতা।
সোমবার, ৪ মে, ২০২০
এক বছরের রাজা-সুকুমার রায়
সুকুমার রায় |
এক ছিলেন সওদাগর— তাঁর একটি সামান্য ক্রীতদাস তাঁর একমাত্র ছেলেকে জল থেকে বাঁচায়। সওদাগর খুশি হয়ে তাকে মুক্তি তো দিলেনই, তা ছাড়া জাহাজ বোঝাই ক'রে নানা রকম বাণিজ্যের জিনিস তাকে বকশিশ দিয়ে বললেন, "সমুদ্র পার হয়ে বিদেশে যাও— এই সব জিনিস বেচে যা টাকা পাবে, সবই তোমার।" ক্রীতদাস মনিবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জাহাজে চড়ে রওনা হল বাণিজ্য করতে।
কিন্তু বাণিজ্য করা আর হল না। সমুদ্রের মাঝখানে তুফান উঠে জাহাজটিকে ভেঙ্গে-চুরে জিনিসপত্র লোকজন কোথায় যে ভাসিয়ে নিল, তার আর খোঁজ পাওয়া গেল না।
বিল গেটস ও সংবাদপত্র বিক্রেতা
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস |
একবার এক লোক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "পৃথিবীতে তোমার চেয়ে ধনী আর কেউ আছে কি?"
বিল গেটস জবাব দিয়েছিল, "হ্যাঁ, এমন একজন আছেন যিনি আমার চেয়েও ধনী”।
তারপর তিনি একটি গল্প বললেন--
এই সময়টি ছিল যখন আমি ধনাঢ্য বা বিখ্যাত ছিলাম না। একবার নিউইয়র্ক বিমান বন্দরে একজন সংবাদপত্র বিক্রেতার সাথে আমার সাক্ষাত হলো। আমি একটি সংবাদপত্র কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেখেছি আমার কাছে যথেষ্ট টাকা নেই। তাই আমি কেনার সিদ্ধান্ত ছেড়ে পেপারটি বিক্রেতার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি তাকে আমার অবস্থার কথা বলেছি। বিক্রেতা বললেন, “আমি আপনাকে বিনামূল্যে দিচ্ছি।” আমি পত্রিকাটি নিয়েছিলাম।
একজন অর্থনীতিবিদ ও বিভ্রান্ত যুবক
একবার একজন অর্থনীতিবিদের ও এক যুবক পাশাপাশি সিটে বসে ট্রেন ভ্রমণ করছিলান। যুবকের মুখে ছিলদুশ্চিন্তার ছাপ। চলতে চলতে উভয়ের মধ্যে পরিচয় হল।
এক পর্যায়ে যুবকটি অর্থনীতিবিদকে বলল, ‘সাত বছর আগে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমার একটি ৫ বছরের মেয়ে আছে। আমার স্ত্রী ভালো মানুষ এবং দেখতেও বেশ। কর্মক্ষেত্রে আমিও যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু এক বছর আগে একটি সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে এবং আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।’
অর্থনীতিবিদ যুবককে জিঙ্গেস করলেন ‘এখন তুমি কী করবে বলে ঠিক করেছো?’
যুবক উত্তর দিলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। কিন্তু এখনো এ- ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আছি।’
খাঁচাবন্দী বাঘ ও সরল ব্রাহ্মণ
এই গল্পটি অনেকেই ছোটবেলায় পড়েছেন। গল্পটি জীবনে চলার পথে একটি চমৎকার দিক নির্দেশনা বলেই আমার মনে হয়, তাই সকলের জন্য শেয়ার করলাম।
এক রাজবাড়ীর সামনে একটি খাঁচায় একটি দুষ্টু বাঘ বন্ধী অবস্থায় ছিল। বাঘটি ছিল খুব দুষ্টু আর হিংসুটে। কেউ তাকে পছন্দ করত না। একদিন রাজার মেয়ের বিয়েতে রাজবাড়িতে অনেক লোকের সমাগম হল। সকলে যখন রাজবারীতে প্রবেশ করছিলেন দুষ্টু বাঘ সবাইকে অনুনয়-বিনয় করছিলেন তার খাঁচার দরজাটা খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেউই বাঘের খাঁচার দরজা খুলে দিলেন না, কেননা সকলে জানতেন এই ভয়ংকর বিপদজঙ্ক বাঘের খাঁচার দরজা খুলে দিলে মহাবিপদ। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন একজন সহজ সরল ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ যখন খাঁচার দরজা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বাঘ হাতজোড় করে ব্রাহ্মণকে বললেন, “আমাকে দয়া করুন প্রভু, আমাকে দয়া করুন। আমার খাঁচার দরজাটা অনুগ্রহ করে খুলে দিন। আমি বনের বাঘ বনে চলে যাবো।”
শনিবার, ২ মে, ২০২০
'সসেমিরা' মহারাজ নন্দ ও গুরু শারদানন্দ (৩২ পুতুলের উপখ্যান)
মহাকবি কালিদাস |
রাজা বিক্রমাদিত্য ও গুরু সারদানন্দ (সংস্কৃতে মহাকবি কালিদাস বত্রিশ পুতুলের উপখ্যান-এর বাঙ্গাল অনুবাদ)
বিশালা নগরে নন্দ নামে মহাশক্তিমান এক রাজা ছিলেন। তাঁর পুত্রের নাম জয়পাল, মন্ত্রীর নাম বহুশ্রুত, পত্মীর নাম ভানুমতী। মন্ত্রী বহুশ্রুত ছয় প্রকার দণ্ডশাস্ত্রবিদ্যা জানতেন। ভানুমতী রাজার অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। রাজা যখন সিংহাসনে বসতেন তখন ভানুমতী তাঁর বাঁ দিকে অর্ধাঙ্গে থাকতেন। তিনি মুহূর্তকালও ভানুমতীকে ছেড়ে থাকতে পারতেন না। একদিন মন্ত্রী মনে মনে ভাবলেন, ‘এই রাজা নির্লজ্জের মতো সভামধ্যে পত্মীকে নিয়ে সিংহাসনে বসেন। সকলেই রানীকে দেখে। এ অত্যন্ত অনুচিত।’ তিনি একদিন অবসর বুঝে রাজাকে বললেন, মহারাজ! আপনার কাছে আমার একটি বিষয় নিবেদন করার আছে।
রাজা বললেন, কী, বলো।
শুক্রবার, ১ মে, ২০২০
চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শী জিং পিং ও ডিম কাহিনী
শী জিং পিং |
চীনের বর্তমান (২০২০) প্রেসিডেন্ট Xi Jing Ping (শী জিং পিং) এক ভাষণে বলেছিলেন:
আমার বাবার দেওয়া তিনটে উপদেশ আমাকে আজ এখানে পৌঁছে দিয়েছে।
ছোটবেলায় আমি খুব স্বার্থপর ছিলাম। সবকিছুতেই নিজের সুবিধে আর লাভটা বুঝে নেবার চেষ্টা করতাম। আমার এই দোষের জন্য আস্তে আস্তে আমার বন্ধুর সংখ্যা কমতে শুরু করল। শেষে অবস্থা এমন হলো যে আমার আর কোনো বন্ধুই অবশিষ্ট রইল না। কিন্তু, সেই অপরিণত বয়েসে আমি এর জন্য নিজেকে দায়ী না করে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বন্ধুরা আসলে হিংসুটে। ওরা আমার ভাল দেখতে পারে না। আমার বাবা সবই লক্ষ করতেন, মুখে কিছু না বললেও।
বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০
কেউ কেউ কথা রাখে-মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন
“কেউ কথা রাখেনি” সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়ের অত্যন্ত বিখ্যাত একটি কবিতার শিরোনাম। কথাগুলো বেশ কাব্যিক ধরনের। তবে “কেউ কেউ কথা রাখে” কোন কবিতার বই নয়, বরং একটা চমৎকার থ্রিলার উপন্যাস। লেখক-মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন।
উপন্যাসের সময়টা ১৯৭২। নববিবাহিত এক তরুণীকে (মিলি) ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে— তদন্তে জড়িয়ে পড়েছেন দুইজন পুলিশ অফিসার, একজন আবার আমাদের লেখক স্বয়ং। মিলির স্বামী মিনহাজের সাথে কথা বলার সময় কিছু ফটোগ্রাম লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফটোগ্রাফগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে লেখকের সন্দেহ হয় ফটোগ্রাফের একজনের উপর। ছবির ব্যক্তির সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে লেখক হানা দেন মিলির বান্ধবীর (রামজিয়া শেহ্রিন) বাড়িতে। এই রামজিয়া শেহ্রিন অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি চরিত্র এই গল্পে। প্রথম দিনই রামজিয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েন লেখক। থ্রিলার উপন্যাসে দেখায় দেয় রোমাঞ্চ।
বর্ণপরিচয়-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
আশির দশক কিংবা তার আগে যাদের জন্ম তাদেরকে সম্ভাবত বর্ণ পরিচয় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।
তবে বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা সম্ভাবত এই বইটির নামও শোনেনি। “বর্ণপরিচয়” ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত একটি বাংলা বর্ণশিক্ষার বই। বইটি দুটি খন্ডে (প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ) বিভক্ত। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ। তখনকার সময়ে দুই পয়সা মূল্যের এই ছোট্ট বইটি বাংলাভাষাবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এক মহাবিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। বর্ণপরিচয় এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শিশুদের উপযোগী সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত বাক্যের সমন্বয়ে রচনা করা হয়েছে। শিশু বর্ণক্রমিক পদ্ধতিতে বর্ণ শিখবে, বর্ণের সঙ্গে মুখে মুখে ছোট ছোট শব্দ শিখবে, এরপর বর্ণপরিচয়-এর পরীক্ষা, তারপর বর্ণযোজনা ও ফলা সংযোগে বানান শেখার সূচনা। এরপর রয়েছে সহজবোধ্য ছোট বাক্যের ছোট ছোট প্রাঞ্জল গদ্য রচনা।
ডিসেপশন পয়েন্ট-ড্যান ব্রাউন
“দ্যা ভিঞ্চি কোড” ড্যান ব্রাউনের সবচেয়ে আলোচিত একটি বইয়ের নাম এবং অবশ্যই আমার পড়া একটি সেরা থ্রিলার। “দ্যা ভিঞ্চি কোড” পড়ার পর ড্যান ব্রাউনের বেশ ভক্ত হয়ে যাই। আমার পড়া ব্রাউনের লেখা দ্বিতীয় বইয়ের নাম “দ্যা লস্ট সিম্বল” আর মাত্র গতকালই শেষ করলাম ড্যান ব্রাউনের লেখা আরো একটি চমৎকার থ্রিলার “ডিসেপশন পয়েন্ট”। বইটা পড়ার সময় সত্যিই মনে হয়েছে এটা একটি থ্রিলার। থ্রিলার বলতে সাধারণত যা বোঝায় অর্থাৎ রহস্য, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা,নাটকীয়তা সবকিছুই চমৎকারভাবে উপস্থিত হয়েছে “ডিসেপশন পয়েন্ট” বইটিতে।
বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যার সাথে যুক্ত হয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় সিনেটর সেজউইক স্যাক্সটন তার একমাত্র মেয়ে র্যাচেল স্যক্সটনের সাথে একটি রেস্টুরেন্ট দেখা করছেন।
মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০
আপনাকে বলছি স্যার
“কোন হাসপাতাল যদি কেবল সুস্থ্য ব্যক্তিদের পরিচর্যা করে আর রোগাক্রান্তদের বাদ দেয় তাহলে তাকে কি বলা হবে?”
এমন প্রশ্নই করা হয়েছে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে “আপনাকে বলছি স্যার” বইটিতে। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা আসলে এই ব্যপারটিকে ঘটতে দেখি প্রতিনিয়ত। যেখানে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়, পুরস্কৃত করা হয় আর ব্যর্থদের, ফেল করাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয় স্কুল থেকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেননি একজন, তিনি ফাদার মিলানি (পুরো নাম ডন লোরেঞ্জো মিলানি)। মিলানি ১৯৫৪ সালে বারবিয়ানা চার্চে (ইতালি) যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি বারবিয়ানাতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিল প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিদ্যালয় থেকে বাদ পড়া ছেলেমেয়েদের নিয়েই গড়ে উঠেছিল তার বিদ্যালয়টি। এই ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়টির শিক্ষা পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে পুরোন ছাত্রেরা অনেক সময়ই নতুনদের পড়াত, আর শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে পড়ুয়াদের সমাধান করতে হত তাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা সমস্যা। এই ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়টিই সে সময় সাড়া জাগিয়েছিল সমগ্র ইতালীজুড়ে।
সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০
নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা
যখন বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়ে বহে যাবে সমুষ্ণ বাতাস
নদীর উপর ছায়া ফেলবে গোধূলিকালীন মেঘ
পুষ্পরেণু ভেসে আসবে বাতাসে
আর পালতোলা নৌকা ভেসে যাবে বিক্ষিপ্ত স্রোতধারায়….
সহসা অবলুপ্ত দৃষ্টি ফিরে পেয়ে তুমি দেখবে—
আমার কেশপাশে বিজড়িত রয়েছে অস্থিনির্মিত মালাঃ
তখন--- কেবল তখনই আমি তোমার কাছে আসব…
একাদশ শতকে কুন্তলা নামে এক নারী এই কথাগুলো বলে হারিয়ে গেল মৃত্যুর অতল গহ্বরে। কিন্তু কার কাছে ফিরে আসার অঙ্গীকার করে গেলেন কুন্তলা? চন্দ্রগর্ভ বা পন্ডিত অতীশ দীপংকর। তারপর কি হলো?
এই প্রশ্নই আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এই বইটি সম্পূর্ণ করতে উৎসাহিত করেছে।
মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০
বই পর্যালোচনা লিখবেন যেভাবে
(একটি উইকিহাউ অনুবাদ)
কোন বই সম্পর্কে আলোচনা করা
মানে বইয়ের সারাংশ বলা নয়,
বইটি সম্পর্কে একটি সমালোচনামূলক আলোচনা করার এটা এক দারুন সুযোগ। আলোচক
হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাথে যথাযথ বিশ্লেষণমূলক অধ্যয়নকে একীভূত করে
ফেলা উচিত হবে। একটি ভালো আলোচনা পাতায় পাতায় কী আছে তার বর্ণনা দেয়; বইটি নিজ
উদ্দেশ্য সাধনে কতটা সফল তার বিশ্লেষণ করে; শেষে একটি অনন্য পরিপ্রেক্ষিত থেকে
প্রতিক্রিয়া ও মতামত ব্যক্ত করে।
প্রথম অংশঃ গ্রন্থ আলোচনার জন্য
প্রস্তুতি
১. বই পড়ার সাথে সাথে নোট
গ্রহণঃ যদি সম্ভব হয় তাহলে বইটি বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার পড়ুন। বারবার একটি বই পড়লে
পাঠকের চোখে গল্পের শরীরটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। গল্পের সজ্জাপদ্ধতি ও চরিত্র বা
চরিত্রগুলো নতুন অথবা ভিন্ন আঙ্গিকে ফুটে ওঠে।
বইটি পাঠরত অবস্থায় আপনার মনে
যে প্রতিক্রিয়া হবে আর তার সাথে সাথে যে ভাবনাগুলো আসবে তা লিখে ফেলুন অথবা রেকর্ড
করে ফেলুন। এলোমেলোভাবে বা ততোটা সঠিক ভাবে না হলেও হবে। আসলে বই পড়ার সাথে সাথে
আপনার মনে যে চিন্তা আসবে তার মধ্যে ঝড় তুলে দেয়ার জন্য এই কাজ করা দরকার।
রবিবার, ১২ মে, ২০১৯
মূর্খের দেশে আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলে। কোলকাতার কোন এক জনসভায় তিনি এ নিয়ে
একটি বক্তব্যও দিয়েছিলেন। কিছু মানুষ এমন দাবী করে থাকেন। তাদের এই দাবীর
প্রেক্ষিতে বাংলা ব্লগিং জগতে এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
দেখা গেছে উগ্র জাতীয়তাবোধ এবং মৌলবাদী কিছু মুসলমান কর্তৃক এই জাতীয় লেখা বেশি
প্রচার করা হয়ে থাকে। সংগত কারণেই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়।
রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত করার চেষ্টা ইতিহাসে নতুন নয়। কিন্তু যারা রবীন্দ্রনাথ
পড়েছেন তারা খুব ভালো করেই তাকে বুঝেছেন। না, আমি দুই-একটা ছোটগল্প বা কবিতা পড়ার
কথা বলছি না, রবীন্দ্রনাথকে
বুঝতে হলে, জানতে
হলে পড়তে হবে অনেক বেশি।
যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাকারী হিসাবে প্রমাণ করতে চান তাদের কেউই
রবীন্দ্রসাহিত্য পড়েননি কিংবা পড়লেও পড়েছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। মূলত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এমন দাবীর কোন
প্রমাণ নেই। ইন্টারনেটে কিছু ব্যক্তিগত ব্লগেই এই জাতীয় কিছু পোস্ট চোখে পড়ে (ঠিক
এই লেখাটির মত), যা
যে কেউ চাইলে যেকোন সময়ে লিখতে পারে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)